ঈদ নিয়ে আসুক মিলনের আনন্দ দরজায় ঈদের কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঈদ মানে মিলন, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে উৎসব। ঈদ মানে ভেদ ভুলে, মানুষের বিভিন্নতা মেনে সবাইকে নিজেদের করে নেওয়ার তৃপ্তি। বিশ্বজুড়েই সময়টা ভালো নেই। মাত্র কয়েক বছর আগেই প্রবল নাড়া দিয়ে সারা পৃথিবীকে এলোমেলো করে গিয়েছিল কোভিডের অতিমারি। তার ইতি ঘটলে আমরা ভেবেছিলাম, এবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু ইউক্রেনে হামলা করল রাশিয়া। বিপুল উত্তেজনায় শক্তিধর দেশগুলো তৎপর হয়ে উঠল। সংকুচিত হয়ে পড়ল জ্বালানি আর পণ্য চলাচলের বিশ্বব্যাপী ছড়ানো পথগুলো। ডলারের দাম আকাশ ছুঁল। বিশ্বমন্দা হানা দিল মানুষের ঘরে ঘরে। এই আবহে দেশে দেশে ঘটছে মানুষের সামাজিক গ্রন্থির ক্ষয়। উগ্রতা আর প্রতিক্রিয়াশীলতা অতি দ্রুত গ্রাস করে নিচ্ছে সত্য, সুন্দর ও শুভকে। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে বিভিন্ন দেশে গত কয়েক বছরে নির্বাচিত সরকারপ্রধানদের আদর্শ আর ভাবনাই বলে দিচ্ছে, পৃথিবীর এখন গভীর গভীরতর অসুখ। তবু এরই মধ্যে ঈদ আসছে। এ যেন দীর্ঘ মরুপথ পার হয়ে মরূদ্যানে পৌঁছানো। ঈদ সেই বিরল মুহূর্তগুলোর একটি, যা আমাদের বলে, মানুষের নিয়তি অশুভে আবদ্ধ থাকার মধ্যে নয়। সুন্দরের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তার চিরন্তন দায়। কানা ছেলের নাম সে পদ্মলোচন রাখে, কারণ সন্তানের অন্ধত্ব নয়, সেটিকে পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়াকেই সে পবিত্রতম কর্তব্য বলে মনে করে। তাই আমাদেরও প্রচেষ্টা এই ঈদকে পাঠকদের কাছে আরও আনন্দময় ও অর্থবহ করে তোলা। দেশের সেরা লেখকদের লেখা দিয়ে ঈদসংখ্যার এই প্রকাশনা আমাদের সেই দায়মোচনের বিনীত প্রচেষ্টা। সবাইকে ঈদ মোবারক। - সাজ্জাদ শরিফ
"স্ট্রিং থিওরি এক রহস্যের নাম। অতিরিক্ত মাত্রা ও কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন নিয়ে এর কাজকারবার। একে থিওরি অব এভরিথিং হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিজ্ঞানীরা এখনো তত্ত্বটি সঠিকভাবে বোঝেন না। কিন্তু আমাদের চেনা জগত্টা কীভাবে এমন হওয়া সম্ভব? ১৯৬৮ সাল। শক্তিশালী পারমাণবিক বল নিয়ে একটা ধাঁধার নতুন সমাধান পেলেন ইতালিয়ান পদার্থবিদ গ্যাব্রিয়েল ভেনিজিয়ানো। কিন্তু তার গভীর অর্থটা বুঝতে পারলেন না। পরে আরও কয়েকজন বিজ্ঞানীর চেষ্টায় জন্ম নিল নতুন একটা তত্ত্ব—স্ট্রিং থিওরি। অনেক টানাপোড়েনের পর একে ‘থিওরি অব এভরিথিং’ বলে দাবি করেন তাত্ত্বিকেরা। অতিরিক্ত মাত্রা, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এবং কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে এর কাজকারবার। স্ট্রিং থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্বের মাত্রা ১০টি। এরকম আরও অদ্ভুতুড়ে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে তত্ত্বটি। হতাশার কথা হলো, এখন পর্যন্ত এটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত নয়। সত্যিকার অর্থে তত্ত্বটি অতি রহস্যময়। কিন্তু আমাদের চেনা জগত্টা কীভাবে এমন হওয়া সম্ভব? সবকিছু আরও সহজ-সরল কিছু হতে পারে না কেন? স্ট্রিং থিওরির এসব তাত্ত্বিক বিষয়ই উঠে এসেছে স্টিভেন স্কট গাবসারের লেখা দ্য লিটল বুক অব স্ট্রিং থিওরি-তে।"
রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত লেখা ছিল এলিয়েনদের নিয়ে। কয়েকজন বিজ্ঞানী ১৯৫০ সালে দুপুরের খাবার খেতে বসে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তারা কোথায়? স্টিফেন হকিং স্পষ্ট মানা করে দিয়েছেন এলিয়েনদের সঙ্গে যেকোনো যোগাযোগের প্রচেষ্টাকে। কেন? আমাদের ছায়াপথে তারা আদৌ আছে কি? ড্রেক ইকুয়েশন কী বলে? আমরা কি একা? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই এই বইয়ের উদ্দেশ্য।
‘বিশ্ব-র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয় না কেন?’ দিনারজাদির প্রশ্নের জবাবে আরব্যোপন্যাসের নায়িকা শেহেরজাদি একের পর এক কারণ বাতলাতে থাকেন এবং নীরবে শুনতে থাকেন বাদশাহ শাহরিয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিচিত্র সমস্যা এবং প্রকৃত সমাধানের এক অভূতপূর্ব সমাহার। মজলিশি ঢঙে, রম্যরীতিতে রচিত এক অপূর্ব আলাপ-গাথা । আরব্যোপন্যাসের বাদশাহ শাহরিয়ার প্রতি রাতে একটি নিকাহ-এ-মুতা করতেন এবং পরদিন ভোরে সেই বেগমকে কতল করাতেন। এই ঘৃণ্য প্রথার অবসানকল্পে উজিরকন্যা শেহেরজাদি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বাদশাহের নিকাহ কবুল করেন। এক রাতের বেগম শেহেরজাদির অন্তিম অনুরোধে বাদশাহ শাহরিয়ারের অনুমতিক্রমে বাসরঘরে আসেন শ্যালিকা দিনারজাদি। রাতের বয়স বাড়লে পূর্বপরিকল্পনামাফিক দিনারজাদি প্রশ্ন করেন: ‘আপা, বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয় না কেন?’ দ্বাদশ রাত্রি ধরে একের পর এক কারণ বাতলে যান শেহেরজাদি, কমবেশি ছত্রিশটি কারণ। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিচিত্র সমস্যা ও প্রকৃত সমাধানের অপূর্ব সমাহার এই ‘আলিফ-লাইলা’ মজলিশি ঢঙে, রম্যরীতিতে রচিত এক অভিনব রসরচনা।
মানুষের মুখে মুখে বা কলমে কলমে অর্থে, ব্যঞ্জনায়, বানানে, প্রয়োগে যেসব শব্দ নিজেদের প্রকৃত জায়গা থেকে সরে এসেছে, ক্ষুদ্র এই অভিধানে সে রকম ৬২টি শব্দের বিচ্যুতি সহজ ভাষায় ধরিয়ে দিয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এ যেন জীবনের শেষ বেলায় এক প্রখর অধ্যাপকের মনের আনন্দে বাংলা ভাষাসমুদ্রে নির্ভার অবগাহন।
"অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ১৯৭১। আজ ৪০ বছর পর এই তিনটি শব্দ দু-তিন জেনারেশনের কাছে অর্থহীন। কিন্তু আমরা যারা এখন পৌঢ় বা বৃদ্ধ, তখন ছিলাম যুবক বা মধ্য বয়সী, তাদের কাছে এই তিনটি শব্দের অর্থ ভয়, হত্যা, লুট, গ্রেপ্তার, ধর্ষণ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ প্রথম অবরুদ্ধ হয় ঢাকা শহর। প্রথম এক সপ্তাহ, প্রতিদিন রাতে দেখা যেত লেলিহান আগুনের শিখা আর শোনা যেত গুলির শব্দ। সকালে দেখা যেত ভস্মীভূত ঘরবাড়ি, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাশ। কারফিউ তো বলবত্ ছিলই, কিন্তু যখনই একটু শিথিল হতো, তখনই দেখা যেত রাজপথ ভরে উঠছে মানুষে। হাজার হাজার মানুষ ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। খোঁজ করছে আত্মীয়স্বজনের। আবার কারফিউ, আগুন, গুলি।"