তমিজ উদ্দীন লোদী আশির দশকের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবেই চিহ্নিত। জীবন যাত্রার পরিবর্তন, বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার সমাজ রাষ্টধারণার পরিবর্তন-এর সাথে কাব্য ভাষার পরিবর্তন ঘটে গেছে এটি তাঁর কবিতা ধারন করেছে। তাঁর কবিতা কেবল মাত্র অর্থহীন শব্দ কতোগুলো ধ্বনির সমাহার কাব্য বলে রোচ্য নয়, যুক্ত হয়েছে নির্মাণ মনস্তত্ত্ব। শুধু মনতুষ্টিতে তন্ময়ী নয়, বরং তাঁর কবিতা লাভকরছে এক নতুন গদ্যলিরিক এবং নিরেট গদ্যবিস্তার। নানা তত্ত্বের সংমিশ্রনে দর্শন বিজ্ঞান ইতিহাস চেতনা এবং সমাজ রাষ্ট্র মানব হিতৈষী ব্যক্তির স্বাধীনতা ঘোষণা করছে দ্ব্যার্থহীন। তাঁর কবিতার একটা বড়গুণ যে তিনি বিষয়ের অনুভব পাঠকের দিকে ঠেলে রাখেন এবং নিজে বসে থাকেন তার সৃষ্টির সামনে- শিল্পী যখন কোন ব্যক্তির চিত্র চিত্রণে যত্নবান হয় তখন সেই ব্যক্তিটি আবিস্কারের অপেক্ষায় কম্পমান এক অনাবিষ্কৃত জগতের মতো। তিনি থেকেছেন বাস্তবে, সে বাস্তবটা তাঁর আকাঙ্খার ভেতর লড়াই রত, জিতবার আনন্দ আছে অনুদ্ধারের বিষাদ আছে এবং এসব নিয়ে তার কবিতার পঙক্তি ছড়িয়ে গেছে বিমূর্ত শিল্পে ধারক বাহকদের শিল্পবোধ পর্যন্ত। নির্মাণ কলায় তিনি এমন একটা সম্মোহন তৈরি করতে পেরেছেন সহজ করে বলার মধ্য দিয়ে যা পাঠককে নিয়ে যাচ্ছে নিজের দিকে চোখমুখ খুলে জানবার ও চিনবার দিকে, তার পরিপার্শের দিকে আর অবারিত করছে দুঃখের উৎসগুলোকে কাব্যিক শিল্প চেতনায়। তার কবিতা চেতনার কবিতা, নিছক কবিতার জন্য কবিতা নয়। এক লাবণ্য ছড়িয়ে তিনি সেই কথাগুলোই বলতে চাইছেন- মানুষের দুঃখ বেদনার রাশি রাশি ইতিহাস। এইসব নিয়েই তার নতুন এই কাব্যগ্রন্থ।