‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ আবুল মনসুর আহমদের আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য গ্রন্থ। স্মৃতিকথার আঙ্গিকে লেখা এই বইটিতে লেখক ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে পুরো পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়-পরবর্তী সময় পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাব্দীর রাজনৈতিক ইতিহাস অত্যন্ত সরল ও অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। লেখক নিজে ছিলেন এই সময়ের অনেক ঘটনার সাক্ষী, কিছু ঘটনায় তাঁর ছিল সরাসরি অংশগ্রহণ। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁর সে অভিজ্ঞতারই বস্ত্তনিষ্ঠ বয়ান পাওয়া যায় বইটিতে। কৌতূহলী পাঠক, ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের কাছে বহুদিন ধরেই এ বই একটি মূল্যবান ও নির্ভরযোগ্য তথ্য-আকর হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ বইটির একটি সুমুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
'আয়না' বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ আবুল মনসুর আহমদ এ বইয়ের গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক ভণ্ডামি ও সামাজিক জীবনের নানাবিধ মূঢ়তা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। গল্পগুলোর সব কটিতেই আপাত-কৌতুকের সঙ্গে সমাজের জন্য লেখকের দরদ ও দুঃখবোধ জড়িত। গল্পগুলো সম্পর্কে তিনি নিজেই লিখেছেন-এই হাসির পেছনে কান্না লুকানো আছে। আবুল মনসুর আহমদ সমাজের সংস্কার চেয়েছেন। সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো দেখিয়েও দিয়েছেন তাঁর গল্পে। তাঁর রচনার একটা বড় গুণ হলো এই উদ্দেশ্যমূলকতা কখনো শিল্পকে ছাড়িয়ে যায়নি। অধিকাংশ গল্পে তিনি বাঙালি মুসলমান সমাজের ভেতরের কথা বলেছেন। এখানে তাঁর অভিজ্ঞতা ও শিল্পদৃষ্টির একটা চমৎকার মেলবন্ধন ঘটেছে। এ বইয়ের গল্পগুলোর পাঠ আজকের দিনেও পাঠকের জন্য স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
বাংলা সাহিত্যে ব্যঙ্গরসাত্মক লেখকের সংখ্যা বেশি নয়। রঙ্গরসাত্মক রচনার মধ্য দিয়ে বিপুল খ্যাতি লাভ করেছিলেন যে কজন লেখক, তাদের মধ্যে আবুল মনসুর আহমদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। রঙ্গব্যঙ্গ রচনার মধ্য দিয়ে তিনি শুধু রসই উপস্থাপন করেননি, দেশ ও সমাজের অসংগতিগুলােও তুলে ধরেছেন আর আঘাত করেছেন আমাদের অনৈতিক ও আপসকামী মনকে। ফুড কনফারেন্স গল্পগ্রন্থটি প্রকাশের পর আমাদের সাহিত্যজগতে আলােড়নের সৃষ্টি হয়। এ বইয়ের গল্পগুলােতে বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সংঘটিত ঘটনার চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে রঙ্গব্যঙ্গের সরসতায় ।হাস্যরসের অন্তরালে নিহিত কঠোর সমাজবাস্তবতা আজও পাঠককে গভীরভাবে ভাবিয়ে তােলে। লেখক প্রায় আশি বছর আগের নানা অসংগতিকে কেন্দ্র করে রসের চাবুকে যে আঘাত হেনেছিলেন, বর্তমানে পাঠক সেই আঘাতের প্রয়ােজনীতা আরও বেশি করে অনুভব করবেন।