বাংলাদেশের কবি ও নাট্যকার আনিসুর রহমানের তিনটি নাটক নিয়ে এ গ্রন্থ 'তিন ভুবনের তিন নাটক'। নাটকগুলো প্রাথমিকভাবে ইংরেজিতে লেখা হলেও আর্মেনিয়া, নরওয়ে, সুইডেনসহ নানা দেশের নাট্যশালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেতার থিয়েটারে কয়েকটি ভাষায় প্রযোজিত হয়েছে। তিনটি নাটকই কাল্পনিক প্রামাণ্য রচনা । 'নাইট জার্নি' নাটকটি নাট্যকার হেনরিক ইবসেন এবং অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গের জীবন ও কর্মকে আশ্রয় করে; ‘হায়েনা ও মন্ত্রী' নাটকটি একজন ফেরারি শরণার্থীর হায়েনা হয়ে যাওয়ার পরিণতিকে এবং ‘আমি মালালা' মনোলগটি তালেবানের খপ্পরে থাকা নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাঈর অপার উদ্যম ও সাহসকে উপজীব্য করে লেখা। তিনটি নাটকের ভিন্ন তিন মেজাজ, আঙ্গিকে আলাদা, নতুন এক পরীক্ষণ; নাটক ও নাট্যতত্ত্বের আন্তর্জাতিক এক সংযোজন ।
আমাদের জাতিরাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে নিয়ে মৌলিক লেখালেখি ও তথ্য উপাত্ত খুব একটা পাওয়া যায় না। বঙ্গমাতা নিজেও অন্দরে থেকে ঠিক সময়ের ঠিক ভূমিকা পালন করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। লোকচক্ষুর আড়াল ভেঙে জনসম্মুখে আসার ব্যাপারে তাঁর ছিল দারুণ অনীহা। যদিও বাংলাদেশের জন্মের মহাকাব্যিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি তিনি মহাকাব্যের কেন্দ্রের একজন অবশ্যম্ভাবী মনীষা। বঙ্গমাতা সম্পর্কে যথাসাধ্য পাঠ পরিক্রমা,কল্পনা আর ইতিহাসের প্রাপ্য সূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানব ইতিহাসের বিরল এ মহিয়সী নারী আমাদের বঙ্গমাতাকে নিয়ে আনিসুর রহমানের লেখা এ মহাকাব্যিক স্বগত-সংলাপ বা এপিক মনোলোগ ‘আমাদের বঙ্গমাতা’। এই এপিক মনোলোগ কিশোর তরুণদের উদ্দেশে লেখা,একই সঙ্গে বেতার ও থিয়েটারে প্রযোজনা উপযোগী একক চরিত্রের একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক।
সুখ ও প্রাপ্তি ক্ষণস্থায়ী। এর বিপরীতে মানুষের জীবন নিরন্তর সংগ্রামের। এই বইয়ের গল্পগুলো যেন অতল সমুদ্রের মাঝখানে বিকল হওয়া একেকটা নৌকা। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসেই চলেছে—উদ্দেশ্যহীন, কূলকিনারাহীন। এখানে প্রেম নেই, আশা নেই। আছে এক ঘোরলাগা গোলকধাঁধার ক্ষয়ে যাওয়া ধূসর জগত্। যে জগতে জীবন হোঁচট খায় পদে পদে। ভেঙে পড়ে চেতনার সব প্রাচীর। মানসিক টানাপোড়েন, অসহায়ত্ব, জীবনের অর্থহীনতা, নৈতিক স্খলন, অবক্ষয়, সংশয় ও মৃত্যুর মতো বিষয়গুলো আনিসুর রহমানের গল্পে উঠে এসেছে। এসব গল্পে সময় অলস, স্থবির। সিসিফাসের নিয়তি নিয়ে সবকিছু যেন ফিরে আসে একই জায়গায় বারবার।