চারদিকে বসন্তের হাওয়া বইছে। আশপাশের বাড়িগুলােতে টিউলিপ ফুটছে। মেপল গাছের কচিপাতাগুলাে সবে গজাতে শুরু করেছে। বিকেল হতেই ছেলেপুলেরা রােলার স্কেট নিয়ে গলির রাস্তায় খেলতে নামছে। এরকম একটা দিনে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই ডাফিস-ড্রাইভ-ইন আইরিশ পাবের লােকগুলাে চেনা আহ্লাদে দুলতে থাকে। দেখে মনে হতে পারে যে ওরা কাঁদছে। কিন্তু আলেহান্দ্রো বােঝাতে চেষ্টা করে যে, ওটা হাসি, কান্না নয়। মানুষের হাসিও। এমন হয়? আলেহান্দ্রো মেক্সিকান খাবারের দোকান ছাড়া অন্য কোথাও সচরাচর তেমন একটা যায় না। আজই প্রথম কী মনে করে যেন সে একটা আইরিশ পাবে নিয়ে এলাে আমাকে। সন্ধ্যা ঘন হবার আগেই উঠোন ঝাড়ু দিয়ে, ময়লার বিনগুলাে সরিয়ে, ঝাউয়ের পাতাগুলাে হেঁটে দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আলেহান্দ্রোর সাথে বেরিয়ে পড়েছিলাম আমি। আমরা দুজন পৃথিবীর দুই প্রান্ত থেকে উড়ে এসে উত্তর আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজে’ পরিচিত হয়েছি। ওর সঙ্গে আমার পছন্দের যেমন কেনাে মিল নেই, তেমনি। সম্পর্কের ব্যাপারেও আমাদের কোনাে আগ্রহ নেই। আমাদের এই পারস্পরিক সম্পর্কটিকে কিছুটা বন্ধুত্ব' অথবা কিছুটা পরিচিত' বলে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে ভাষার প্রতি ওর আগ্রহ অপরিসীম। মােট পাঁচটি ভাষায় সে ভাঙা ভাঙা কথা বলতে পারে। তার মধ্যে বাংলা একটি। | পাবে ঢুকতেই বাইরের ফুরফুরে হাওয়াটা হঠাৎ সরে গেল। একটা কটু গন্ধ নাকে এসে লাগলাে। চারদিকে সবাই কথা বলছে। কাঁটা চামচ, প্লেট গ্লাস আর কথার শব্দ গমগমে সুরের মূর্ধনা তৈরি করেছে। আধাে-আলােয় শরীরগুলাে এদিক ওদিক মাতাল ছায়ার মতন নড়ছে। কিন্তু মানুষ কই? যেন কতগুলাে জানােয়ার বসে আছে। শেয়ালের চেহারার লােকটা একটা বিয়ারের ক্যান নিয়ে বসে টেলিভিশনে হকি খেলা দেখছে। শুকরের মতাে দেখতে চারটা লােক পাশের টেবিলে বসে তাস খেলছে। ওদের চেহারায় দ্রতার ছিটেফোটা নেই। অথচ এদের কেউই কোনাে চেচামেচি বা অভদ্র আচরণ করছে না।